দেশে দেশে ঈদুল আজহা পালনের ভিন্ন রীতি

ঈদুল আজহার উৎসব একেক দেশে একেক নামে ও একেক ঢঙে পালন করা হয়। যেমন- তুরস্কে ‘কুরবান বায়রামি’, ইয়েমেন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও আলজেরিয়াতে ‘ঈদ-আল-কাবির’ সেনেগাল ও পশ্চিম আফ্রিকাতে ‘তাবাস্কি’ বা ‘তোবাস্কি’ বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের নানা দেশে নামের ভিন্নতার মতো এই ঈদ পালন রীতিতেও কিছু ভিন্নতা আছে। এ বিষয়ে কিছু কথা জেনে নেয়া যাক।

 

মিশর:মিশরে ঈদুল আজহাকে বলা হয় ‘ঈদ-ইল-কিবর্’। ঈদের নামাজের পর থেকে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর। এছাড়াও নানান ধরনের আয়োজন করা হয় পুরো দেশ জুড়ে। মিশরের দাতব্য সংস্থাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে গোশত বিতরণ করা হয়। এই দিনে সবাই পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্বোধন করে বলে, ‘কোল সানা ওয়া ইন্তা তায়েব’। এর অর্থ  ‘আশা করি আপনার প্রতিটি বছর ভালো যাবে’।

বাংলাদেশ : বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহাকে ‘কোরবানির ঈদ’ ও বলা হয়ে থাকে। ঈদের এক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন দোকানপাটে কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়। কোরবানির পশু হিসেবে গরু, ছাগল বা মহিষ বাছাই করে নেয়া হয়। এছাড়া কিছু কিছু উটও কোরবানি দিতে দেখা যায়। এসব উট বিশেষত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই আমদানি করা হয়ে থাকে। ঈদের নামাজের পরপরই শুরু হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে কোরবানির সব আয়োজন। সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিন দিন ব্যাপী চলে ঈদুল আজহার উৎসব।

 

ভারত: ভারতে ঈদুল আজহাকে ‘বকরি ঈদ’ও বলা হয়। উৎসবের এই দিনটি বেশ আনন্দ আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় এই দেশটিতে। তবে মহারাষ্ট্রতে গরুর গোশত নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সেখানকার মুসলমানেরা কোরবানির বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিতই থাকেন। মুম্বাই হাইকোর্টে পেশ করা এক আবেদন নাকচ করে দেয়া হলে পরে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করা হয়। কারণ এই নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার আদায়ের পথে একটি বাধা।

 

সৌদি আরব: ঈদুল আজহার মৌসুমে সারা বিশ্বের লাখো মুসল্লি একত্র হন এই দেশটিতে হজ পালনের উদ্দেশ্যে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমদের সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভিন্ন এক আঙ্গিকে সেজে ওঠে সৌদি আরব। এদেশের নাগরিকেরা এমনিতেই সোনার জিনিস কিনতে পছন্দ করেন। আর উৎসবের এই সময়ে তারা বেশ আয়োজন করেই সোনার জিনিস কিনতে চান। তাই এই সময়টাতে সেখানে হজ পালন, পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে সোনার জিনিস বাণিজ্যের পরিমাণও বেড়ে যায়।

 

পাকিস্তান: পাকিস্তানে ঈদুল আজহা পালন করা হয় চারদিন ব্যাপী। সেখানে ঈদের দিন জামাতে খুতবার পর শুরু হয় নামাজ। সামর্থ্য অনুযায়ী মুসল্লিরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকে। এরপর শুরু হয় গোশতবিতরণের পালা।

 

রাশিয়া:রাশিয়াতে ঈদুল আজহাকে ‘কুরবান বেরাম’ বলা হয়ে থাকে। সাধারণত কোরবানির পশু হিসেবে ছাগল বেছে নেয়া হয়। তবে গরুও কুরবানি দেয়া হয়ে থাকে। সেখানে এই ঈদ পালন করা হয় দুই থেকে তিন দিন ব্যাপী। মুখরোচক খাবারই এই ঈদের আয়োজনে মূল আকর্ষণ।

 

ইন্দোনেশিয়া :এই দেশে ঈদুল আজহাকে ‘লেবারান হাজী’ও বলা হয়ে থাকে। এই দেশের খোলামেলা জায়গাগুলোই বিশেষত ঈদের জামাতের জন্য খুব জনপ্রিয়। ত্যাগের মূর্ত প্রতীক স্বরূপ এখানে একটি পাহাড়ের মতো জিনিস তৈরি করা হয়। যাকে ‘গুনুনগান’ বলা হয়। এই পাহাড়ের মতো জিনিসটি মূলত বানানো হয় বিভিন্ন রকমের সবজি ও ফলমূল দিয়ে। নামাজের ঠিক পরপরই এই গুনুনগান থেকে সবাই সবজি ও ফলমূল খায়। বলা হয়ে থাকে, ঈদুল আজহার দিনে গুনুনগান থেকে সবজি ও ফলমূল খেলে সারা বছর সুখ ও সমৃদ্ধিতে কাটে।

যুক্তরাজ্য :পুরো যুক্তরাজ্যের মধ্যে বার্মিংহামে রয়েছে সবচাইতে বেশি মুসলিমের জমায়েত। সেখানে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় ছোট একটি হেলথ পার্কে। তবে ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাতে বিভিন্ন পার্কে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। শুধুমাত্র ঈদের জামাতই এই ঈদ আয়োজনের বড়সড় এক মিলনমেলা।

 

চীন:চীনে রমজান মাসে মুসলিমদের রোজা রাখার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও কিন্তু ঈদুল আজহাতে পশু কোরবানি দেয়াতে কোনো বাধা নেই।

সূত্র: রোরমিডিয়া অবলম্বনে

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই

» তোষামোদি করতে কিছু নেতা তারেক রহমানকে মাস্টারমাইন্ড বলছেন: সারজিস

» নতুন বাংলাদেশের জন্ম ৫ আগস্ট, ৮ নয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ

» গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই: প্রেসসচিব

» গণতন্ত্র ধ্বংসকারী তিন সিইসির বিচার হওয়া উচিত : রিজভী

» ইরান কখনও আত্মসমর্পণ করবে না: খামেনি

» আগস্টে মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ

» যেকোনও সময় ভোটার তালিকাভুক্তির ক্ষমতা চায় ইসি

» আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস লক্ষ্মীপুরে বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা  

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দেশে দেশে ঈদুল আজহা পালনের ভিন্ন রীতি

ঈদুল আজহার উৎসব একেক দেশে একেক নামে ও একেক ঢঙে পালন করা হয়। যেমন- তুরস্কে ‘কুরবান বায়রামি’, ইয়েমেন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও আলজেরিয়াতে ‘ঈদ-আল-কাবির’ সেনেগাল ও পশ্চিম আফ্রিকাতে ‘তাবাস্কি’ বা ‘তোবাস্কি’ বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের নানা দেশে নামের ভিন্নতার মতো এই ঈদ পালন রীতিতেও কিছু ভিন্নতা আছে। এ বিষয়ে কিছু কথা জেনে নেয়া যাক।

 

মিশর:মিশরে ঈদুল আজহাকে বলা হয় ‘ঈদ-ইল-কিবর্’। ঈদের নামাজের পর থেকে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর। এছাড়াও নানান ধরনের আয়োজন করা হয় পুরো দেশ জুড়ে। মিশরের দাতব্য সংস্থাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে গোশত বিতরণ করা হয়। এই দিনে সবাই পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্বোধন করে বলে, ‘কোল সানা ওয়া ইন্তা তায়েব’। এর অর্থ  ‘আশা করি আপনার প্রতিটি বছর ভালো যাবে’।

বাংলাদেশ : বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহাকে ‘কোরবানির ঈদ’ ও বলা হয়ে থাকে। ঈদের এক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন দোকানপাটে কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়। কোরবানির পশু হিসেবে গরু, ছাগল বা মহিষ বাছাই করে নেয়া হয়। এছাড়া কিছু কিছু উটও কোরবানি দিতে দেখা যায়। এসব উট বিশেষত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেই আমদানি করা হয়ে থাকে। ঈদের নামাজের পরপরই শুরু হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে কোরবানির সব আয়োজন। সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিন দিন ব্যাপী চলে ঈদুল আজহার উৎসব।

 

ভারত: ভারতে ঈদুল আজহাকে ‘বকরি ঈদ’ও বলা হয়। উৎসবের এই দিনটি বেশ আনন্দ আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় এই দেশটিতে। তবে মহারাষ্ট্রতে গরুর গোশত নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সেখানকার মুসলমানেরা কোরবানির বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিতই থাকেন। মুম্বাই হাইকোর্টে পেশ করা এক আবেদন নাকচ করে দেয়া হলে পরে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করা হয়। কারণ এই নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার আদায়ের পথে একটি বাধা।

 

সৌদি আরব: ঈদুল আজহার মৌসুমে সারা বিশ্বের লাখো মুসল্লি একত্র হন এই দেশটিতে হজ পালনের উদ্দেশ্যে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমদের সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভিন্ন এক আঙ্গিকে সেজে ওঠে সৌদি আরব। এদেশের নাগরিকেরা এমনিতেই সোনার জিনিস কিনতে পছন্দ করেন। আর উৎসবের এই সময়ে তারা বেশ আয়োজন করেই সোনার জিনিস কিনতে চান। তাই এই সময়টাতে সেখানে হজ পালন, পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে সোনার জিনিস বাণিজ্যের পরিমাণও বেড়ে যায়।

 

পাকিস্তান: পাকিস্তানে ঈদুল আজহা পালন করা হয় চারদিন ব্যাপী। সেখানে ঈদের দিন জামাতে খুতবার পর শুরু হয় নামাজ। সামর্থ্য অনুযায়ী মুসল্লিরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকে। এরপর শুরু হয় গোশতবিতরণের পালা।

 

রাশিয়া:রাশিয়াতে ঈদুল আজহাকে ‘কুরবান বেরাম’ বলা হয়ে থাকে। সাধারণত কোরবানির পশু হিসেবে ছাগল বেছে নেয়া হয়। তবে গরুও কুরবানি দেয়া হয়ে থাকে। সেখানে এই ঈদ পালন করা হয় দুই থেকে তিন দিন ব্যাপী। মুখরোচক খাবারই এই ঈদের আয়োজনে মূল আকর্ষণ।

 

ইন্দোনেশিয়া :এই দেশে ঈদুল আজহাকে ‘লেবারান হাজী’ও বলা হয়ে থাকে। এই দেশের খোলামেলা জায়গাগুলোই বিশেষত ঈদের জামাতের জন্য খুব জনপ্রিয়। ত্যাগের মূর্ত প্রতীক স্বরূপ এখানে একটি পাহাড়ের মতো জিনিস তৈরি করা হয়। যাকে ‘গুনুনগান’ বলা হয়। এই পাহাড়ের মতো জিনিসটি মূলত বানানো হয় বিভিন্ন রকমের সবজি ও ফলমূল দিয়ে। নামাজের ঠিক পরপরই এই গুনুনগান থেকে সবাই সবজি ও ফলমূল খায়। বলা হয়ে থাকে, ঈদুল আজহার দিনে গুনুনগান থেকে সবজি ও ফলমূল খেলে সারা বছর সুখ ও সমৃদ্ধিতে কাটে।

যুক্তরাজ্য :পুরো যুক্তরাজ্যের মধ্যে বার্মিংহামে রয়েছে সবচাইতে বেশি মুসলিমের জমায়েত। সেখানে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় ছোট একটি হেলথ পার্কে। তবে ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাতে বিভিন্ন পার্কে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। শুধুমাত্র ঈদের জামাতই এই ঈদ আয়োজনের বড়সড় এক মিলনমেলা।

 

চীন:চীনে রমজান মাসে মুসলিমদের রোজা রাখার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও কিন্তু ঈদুল আজহাতে পশু কোরবানি দেয়াতে কোনো বাধা নেই।

সূত্র: রোরমিডিয়া অবলম্বনে

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com